ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing)
ক্লাউড কম্পিউটিং: ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing) হলো ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি বিশেষ পরিসেবা বা একটা ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স শেয়ার, কম্পিউটিং সেবা, সার্ভার, স্টোরেজ, সফটওয়্যার প্রভৃতি সেবা সহজে ক্রেতার সুবিধা মতো, চাহিবামাত্র ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করা বা ভাড়া দেওয়া হয়।
এটি কোনো নির্দিষ্ট টেকনোলজি নয়, বেশ কয়েকটি টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা একটা ব্যবসায়িক মডেল বা বিশেষ পরিসেবা। যাতে নিম্নোক্ত ৩ টি বৈশিষ্ট্য থাকবে।
১। রিসোর্স স্কেলেবিলিটি
২। অন-ডিমান্ড
৩। পে-অ্যাজ-ইউ-গো
রিসোর্স স্কেলেবিলিটি: ছোট বা বড় যেকোন ক্রেতার সকল ধরণের চাহিদাই মেটাতে হবে।
অন-ডিমান্ড: ক্রেতা যখন চাইবে, তখনই সেবা দিতে হবে। ক্রেতা তার ইচ্ছা অনুযায়ী যখন খুশি তার চাহিদা বাড়াতে বা কমাতে পারবে।
পে-অ্যাজ-ইউ-গো: এটি একটি পেমেন্ট মডেল। ক্রেতাকে পূর্বে থেকে কোনো পেমেন্ট করতে হবে না। ক্রেতা যতটুকু রিসোর্স যত সময়ের জন্য ব্যবহার করবে কেবলমাত্র তার জন্যই পেমেন্ট দিতে হবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর বৈশিষ্ট্য:
১। বিভিন্ন ধরণের রিসোর্স (হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ইত্যাদি) শেয়ার করে কোন ব্যক্তি বা কোম্পানির খরচ কমানো যায়।
২। অধিক নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ সিস্টেম।
৩। এটি যেকোন জায়গা থেকে যেকোন সময় সহজে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করা যায়।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
ক্লাউড কম্পিউটিং এর সেবাসমূহঃ
১। অবকাঠামোগত সেবা (Infrastructure as a Service-IaaS)
২। প্লাটফর্মভিত্তিক সেবা (Platform as a Service-PaaS)
৩। সফটওয়্যার সেবা (Software as a Service-SaaS)
৪। নেটওয়ার্ক সেবা (Network as a Service- NaaS
অবকাঠামোগত সেবা (IaaS: Infrastructure-as-a-Service): এই ধরণের সেবায় অবকাঠামো বা Infrastructure ভাড়া দেয়া হয়। অর্থাৎ এই ধরণের সেবায় সার্ভারে বিভিন্ন ভার্চুয়াল মেশিন চালানো হয়। ক্লায়েন্ট সেই মেশিন ভাড়া নেয় এবং সেই মেশিনে ক্লায়েন্ট নিজের ইচ্ছামতো সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারে। এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার এর মতই কাজ করে এবং সিস্টেমের পুরো নিয়ন্ত্রণ ইউজারের হাতে থাকে। অর্থাৎ ইউজার নিজের মত করে সেই মেশিনে দরকারী কাজ করতে পারে।
আমাজন ইলাস্টিক কম্পিউটিং ক্লাউড (EC2) এর উদাহরণ। (EC2)-তে ডেটা সেন্টারের প্রতি সার্ভারে ১ থেকে ৮টি ভার্চুয়াল মেশিন চলে, ক্লায়েন্টরা এইগুলো ভাড়া নেয়। ভার্চুয়াল মেশিনে নিজের ইচ্ছামতো উইন্ডোজ বা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বসানো যায়।
প্লাটফর্মভিত্তিক সেবা (Platform as a Service-PaaS): এখানে সরাসরি ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া না দিয়ে ভাড়া দেয়া হয় প্ল্যাটফর্ম, যার উপরে ব্যবহারকারী অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারে। ক্লাউড প্রোভাইডার এখানে ভার্চুয়াল মেশিনগুলোর উপরে আরেকটা লেয়ার যোগ করতে পারে। ব্যবহারকারী Application Programming Interface-API ব্যবহার করে এই প্ল্যাটফর্ম লেয়ারের নানা সার্ভিস কনফিগার ও ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হল, উক্ত সিস্টেম, ডেটাবেজ কিংবা এপ্লিকেশান এর নিয়ন্ত্রণ ইউজারের থাকবে না যেটা শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ ছিল। গুগলের অ্যাপ ইঞ্জিন এর একটা উদাহরণ।
সফটওয়্যার সেবা (Software as a Service-SaaS): এই ব্যবস্থায় ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহারকারী ইন্টারনেটের মাধ্যমে চালাতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে Google Docs এর কথাই ধরা যাক। ইন্টারনেট ও ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে Google Docs দিয়ে মাইক্রোসফট অফিসের প্রায় সব কাজই করা যায় (যেমন- ডকুমেন্ট, স্প্রেডশীট, প্রেজেন্টেশন)। গুগল এই অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারটি আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সফটওয়্যারটি চলছে গুগলের ক্লাউডের উপরে।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
নেটওয়ার্ক সেবা(Network as a Service-SaaS): এই সেবাটি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীকে আন্তঃক্লাউড নেটওয়ার্ক বা ট্রান্সপোর্ট কানেকটিভিটি সুবিধা প্রদান করে। এটি ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক ও কম্পিউটার রিসোর্স অনুযায়ী ব্যবহারকারীকে রিসোর্স ব্যবহারের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করে। এই সার্ভিসের বিভিন্ন মডেলের মধ্যে VPN (Virtual Private Network), BoD (Bandwidth on Demand), Mobile Network Virtualization উল্লেখযোগ্য।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদঃ
১। পাবলিক ক্লাউড
২। প্রাইভেট ক্লাউড
৩। কমিউনিটি ক্লাউড
৪। হাইব্রিড ক্লাউড
পাবলিক ক্লাউড: পাবলিক ক্লাউড হলো এমন ক্লাউড, যেখানে পাবলিক অ্যাপলিকেশন,স্টোরেজ ও অন্যান্য রিসোর্সসমুহ সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। অর্থাৎ যে টাকা দিবে, সেই সার্ভিস পাবে, এমন ক্লাউডকে বলা হয় পাবলিক ক্লাউড। যেমন- আমাজনের EC2। এসব ক্লাউডে সুবিধা হলো যে কেউ এর সেবা নিতে পারে। আর অসুবিধাটা হলো একই জায়গায় একাধিক ক্লায়েন্ট ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে।
প্রাইভেট ক্লাউড: যখন কোনো বড় সংস্থার নিজের নানা সার্ভিস চালানোর জন্য ক্লাউড সিস্টেম ডেভেলোপ করে তখন তাকে প্রাইভেট ক্লাউড বলে। এটি সাধারনত অভ্যন্তরীণভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয়। এতে খরচ অনেক বেশি হয়, নিজস্ব ডেটা সেন্টার বসাতে হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজস্ব জনবল রাখার প্রয়োজন হয়। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এর সুবিধা হচ্ছে, কোনো বড় কোম্পানিতে ১০টা ডিপার্টমেন্ট থাকলে ১০টা ডেটা সেন্টার না বসিয়ে একটাকেই ক্লাউড মডেলে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যায়।
কমিউনিটি ক্লাউড: সাধারণত কোনো বিশেষ কমিউনিটির জন্য যে ক্লাউড ব্যবস্থা করা হয় সেটি হলো কমিউনিটি ক্লাউড। ধরা যাক, ঢাকা সেনানিবাসে শুধু অফিসার ও সৈনিকদের জন্য একটা ক্লাউড বসানো হলো, তাহলে কেবল অফিসার ও সৈনিকরাই এর সার্ভিস নিতে পারবে। কমিউনিটি ক্লাউডের সুবিধা হলো, কমিউনিটির মধ্যে ইউজার সীমাবদ্ধ থাকে বলে এখানে সিকিউরিটির কোনো সমস্যা নেই। আর অসুবিধা হলো এখানে ক্লায়েন্টের সংখ্যা সীমিত বলে খরচ বেশি হয়।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
হাইব্রিড ক্লাউড: দুই বা ততোধিক ক্লাউডের সমন্বয়ে গঠিত ক্লাউডকে হাইব্রিড ক্লাউড বলে। এক্ষেত্রে হাইব্রিড ক্লাউড হলো পাবলিক আর প্রাইভেটের সংমিশ্রণ অথবা একাধিক ভিন্ন ক্লাউডের সংমিশ্রণ। এর ফলে অধিক পরিমান রিসোর্স শেয়ার করা যায়।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা সমুহ:
১। যেকোনো স্থান থেকে যেকোন সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড সেবা গ্রহণ করা যায়।
২। নিজস্ব হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয় না ফলে খরচ কম।
৩। কোম্পানির অপারেটিং খরচ তুলনামুলক কম থাকে।
৪। ক্লাউডে সংরক্ষিত তথ্য যেকোনো স্থান থেকে যেকোন সময় এক্সেস করা যায় এবং তথ্য কীভাবে প্রসেস বা সংরক্ষিত হয় তা জানার প্রয়োজন হয় না।
৫। সহজে কাজকর্ম মনিটরিং এর কাজ করা যায় ফলে বাজেট ও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করা যায়।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর অসুবিধা সমুহ:
১। ডেটা, তথ্য অথবা প্রোগ্রাম বা অ্যাপলিকেশন এর উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
২। এটি দ্রুতগতি সম্পন্ন নয়।
৩। আবহাওয়াজনিত কারণে বা ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হলে সার্ভিস বিঘ্নিত হয়।
৪। ক্লাউড সাইটটিতে সমস্যা দেখা দিলে ব্যবহারকারীরা তার সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হন।
৫। তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের এবং তথ্য পাল্টে যাওয়ার অর্থাৎ হ্যাকিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬। তথ্য ক্লাউডে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তা কোথায় সংরক্ষণ হচ্ছে বা কিভাবে প্রসেস হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানার উপায় থাকে না।