ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)
ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery): গ্রিক শব্দ ক্রাউস(kruos) থেকে ক্রায়ো (Cryo) শব্দটি এসেছে যার অর্থ বরফের মতো ঠাণ্ডা এবং ‘সার্জারি’ অর্থ শৈল্য চিকিৎসা। অর্থাৎ ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery) ক্রায়োসার্জারি হলো এক ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি যাতে অত্যধিক শীতল তাপমাত্রা প্রয়োগ করে শরীরের অস্বাভাবিক বা রোগাক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়। ক্রায়োসার্জারিকে অনেক সময় ক্রায়োথেরাপি বা ক্রায়োবায়োলেশনও বলা হয়।
ক্রায়োজনিক এজেন্ট কী ?
এই পদ্ধতিতে রোগাক্রান্ত অংশ হিমায়িত করা বা নির্দিষ্ট শীতলতায় পৌঁছানোর জন্য নিমোক্ত ক্রায়োজনিক এজেন্ট বা গ্যাসগুলো ব্যবহার করা হয়-
- তরল নাইট্রোজেন
- তরল আর্গন গ্যাস
- তরল অক্সিজেন
- তরল কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস
- ডাই মিথাইল ইথাইল প্রোপ্রেন ইত্যাদি।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
ক্রায়োসার্জারি বহিঃত্বকে যেভাবে কাজ করেঃ
বাহ্যিক ক্যান্সার কোষ, তিল বা দাগের জন্য স্প্রেয়ার বা কটন বাড বা তুলার মাধ্যমে তরল নাইট্রোজেন অথবা আর্গন গ্যাস প্রয়োজনীয় স্থানে প্রয়োগ করতে হয়। ফলে ফুসকুড়ি তৈরি হয় যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ত্বক থেকে অপসারিত হয়। একই সাথে নতুন টিস্যু তৈরি হয়।
ক্রায়োসার্জারি অভ্যন্তরস্ত যেভাবে কাজ করেঃ
প্রথমে সিমুলেটেড সফটওয়্যার দ্বারা রোগাক্রান্ত কোষগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
পরবর্তীতে শরীরের অভ্যন্তরস্ত টিউমার বা রোগাক্রান্ত কোষের জন্য কাটাছেঁড়া ছাড়াই ইমেজিং যন্ত্রের(MRI,আলট্রা সাউন্ড) সহায়তায় ক্রায়ো সূচ অথবা ক্রায়োপ্রোবের মাধ্যমে ক্রায়োজনিক এজেন্ট রোগাক্রান্ত কোষে প্রয়োগ করা হয় ।
ফলে ১০-১২ সেকেন্ডের মধ্যে কোষের তাপমাত্রা -৪১ থেকে -১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে আসে। তাপমাত্রা অত্যধিক হ্রাসের কারণে কোষের পানি জমাটবদ্ধ হয়ে ঐ টিস্যুটি বরফপিণ্ডে পরিণত হয়। বরফপিণ্ডে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধের কারণে টিস্যুটি মারা যায় ।
পূনরায় কোষের ভিতরে হিলিয়াম গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে তাপমাত্রা ২০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে উঠানো হয়। ফলে জমাটবদ্ধ টিস্যুটির বরফ গলে যায় এবং মৃত কোষগুলো স্বাভাবিক শরীরগত প্রক্রিয়ায় তা ধীরে ধীরে অপসারিত হয়ে যায় ।
ক্রায়োসার্জারিতে আইসিটির ভূমিকাঃ
১। সার্জারীর পূর্বে রোগাক্রান্ত কোষ বা টিস্যুর অবস্থান নির্ণয়ে MRI (Magnetic Resonance Imaging) বা আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়।
২। সমস্ত কার্যাবলী পর্যবেক্ষণের জন্য সারাক্ষণ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।
৩। ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery) চিকিৎসা ব্যবস্থায় ডাক্তারদের অভিজ্ঞ করে তুলতে প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।
৪। রোগীর তথ্য, চিকিৎসার গবেষণার ফলাফল ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার ডেটাবেজ সিস্টেম তৈরি করা হয়।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery ) ব্যবহারঃ
- মানব শরীরের ত্বকের উপরিস্থ বিভিন্ন রোগ যেমন- ত্বকের ছোট টিউমার, তিল, আঁচিল, ফুসকুড়ি, প্রদাহ, ক্ষতিকর ক্ষত, মেছতা, ত্বকের ক্যান্সার চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হয় ৷
- ক্রায়োসার্জারি দ্বারা অভ্যন্তরীণ কিছু রোগ যেমন – যকৃত ক্যান্সার , প্রস্টেট ক্যান্সার , ফুসফুস ক্যান্সার , মুখের ক্যান্সার , গ্রীবাদেশীয় গোলযোগ , পাইলস ক্যান্সার , স্তন ক্যান্সার ইত্যাদির চিকিৎসাও করা হয়৷
- মানবদেহের কোষকলার কোমল অবস্থা Planter Fasciitis এবং Fibroma ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় ৷
ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery ) সুবিধাঃ
- অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় ক্যান্সার ও নিউরোসার্জারি চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি অনেক সাশ্রয়ী।
- সার্জারী সম্পন্ন করতে সময় কম লাগে।
- ক্রায়োসার্জারির সুবিধা হলো এটি বারবার করা সম্ভব।
- অপারেশনজনিত কাটা-ছেঁড়ার কোনো জটিলতা নেই।
- এটি সাধারণ সার্জারির চেয়ে কম বেদনাদায়ক।
- রক্তপাত হয় না বললেই চলে, হলেও খুব কম।
- জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বহুল প্রচলিত কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি এবং বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের চেয়ে এই পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
- রোগীকে কোন পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয় না।
- সার্জারি শেষে রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয় না।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery ) অসুবিধাঃ
- এই পদ্ধতিতে রোগাক্রান্ত কোষ বা টিস্যুর সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে ব্যর্থ হলে এবং ক্রায়োসার্জারি ব্যবহারে সুস্থ কোষের ক্ষতি হতে পারে।
- এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তবে আশার কথা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ক্ষণস্থায়ী।
- ত্বকের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারির ফলে ত্বক ফুলে যায়, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সংবেদনশীলতা হ্রাস পায়।
- লিভার ও ফুসফুসের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাদের ক্ষেত্রেই হয় যাদের প্রস্টেট গ্রন্থিগত সমস্যা রয়েছে।
মহাকাশ অভিযানঃ
মহাকাশ অভিযান হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ঊর্ধ্ধে মহাকাশ উড্ডয়ন এবং ঐ স্থানের পরিবেশ ও ভৌত ধর্মাবলিকে পর্যবেক্ষণ করা। স্বয়ংক্রিয় ভাবে বা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কিংবা নভোচারীবাহী মহাকাশযান দ্বারা মহাকাশ অভিযান পরিচলনা করা যায়। মনুষ্যবাহী নভোযান এবং মনুষ্যহীন বা রোবটিক নভোযান উভয় মাধ্যমেই এই অভিযান পরিচলনা ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রথম মানুষ বহনকারী মহাকাশযান ভস্টক-১।
মহাকাশ অভিযান এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
১। মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে মহাশূন্যস্থিত কোন বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়।
২। মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে পৃথিবী সম্পর্কে এবং মহাকাশ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ।
৩। মহাকাশে বাণিজ্যিকভাবে পদার্থ প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন।
৪। পৃথিবীর বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও নতুন সীমানা আওত্তাধীন করা।