ডেটা ট্রান্সমিশন (Data Transmission)
ডেটা ট্রান্সমিশন মেথডঃ ডেটা ট্রান্সমিশন (Data Transmission) বলতে ডেটা পরিবহন বা ডেটার স্থানান্তরকে বুঝায়। ডেটা ট্রান্সমিশন হওয়ার জন্য প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকতে হয়, এই পদ্ধতিকে ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বা পদ্ধতি বলে।
তারের সংযোগ সংখ্যার ভিত্তিতে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি দুই প্রকারের। যেমন:
- সমান্তরাল ডেটা ট্রান্সমিশন (Parallel Data Transmission)
- অনুক্রম/সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন (Serial Data Transmission)
সমান্তরাল ডেটা ট্রান্সমিশনঃ
সমান্তরাল ডেটা ট্রান্সমিশনে (Data Transmission) একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে একই সাথে একাধিক ডেটা বিট প্রেরণ করা হয়। প্রতিটি চ্যানেল একই সময়ে একটি বিট বহন করে। অর্থাৎ প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে সমান্তরালে ডেটা স্থানান্তর করলে তাকে সমান্তরাল ডেটা ট্রান্সমিশন বলে।
সমান্তরাল ট্রান্সমিশন মেথড ব্যবহৃত হয় যখন:
- বিপুল পরিমাণে ডেটা প্রেরণ করার প্রয়োজন হয়;
- সময়-সংবেদনশীল ডেটা প্রেরণ করার ক্ষেত্রে;
- এবং ডেটা দ্রুত প্রেরণ করা প্রয়োজন হলে;
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
উদাহরণস্বরূপ– ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে ডেটা প্রেরণে সমান্তরাল ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড ব্যবহৃত হয়। কারণ ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য প্রচুর পরিমাণে ডেটা ট্রান্সমিশনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ডেটাগুলো সময় সংবেদনশীল, কারণ ধীর গতির ডেটা স্ট্রিমগুলোর ফলাফল দর্শকের খারাপ অভিজ্ঞতা হবে। এছাড়া প্যারালাল প্রিন্টার পোর্ট ও ক্যাবল ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাথে প্রিন্টারের সংযোগ ইত্যাদি।
সুবিধাঃ এটি প্রোগ্রাম করা সহজ; এবং ডেটা দ্রুত প্রেরণ করা যায়।
অসুবিধাঃ এই পদ্ধতি ব্যয় সাপেক্ষ; কারণ n বিট ডেটা ট্রান্সমিশন করার জন্য n টি চ্যানেল প্রয়োজন।
সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশনঃ
সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশনে (Data Transmission), ডেটা বিটগুলো একের পর এক একক চ্যানেলে প্রেরণ করা হয়। প্রতিটি বিটের একটি ক্লক পালস রয়েছে। একই সময়ে আটটি বিট এর সাথে একটি স্টার্ট এবং স্টপ বিট (যথাক্রমে 0 এবং 1) প্রেরণ করা হয়। এটি একটি নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি; কারণ পূর্ববর্তী ডেটা বিট ইতিমধ্যে পৌঁছে থাকলে কেবল অপর একটি ডেটা বিট প্রেরণ করা হয়। একের পর এক নির্দিষ্ট ক্রমে ডেটা বিট প্রেরণ করার ফলে এটি ডেটা ইন্টিগ্রিটি(integrity) নিশ্চিত করে। এইভাবে, ডেটা বিট একে অপরের সাথে সিঙ্কে প্রাপ্ত হয়।
সিরিয়াল ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয় যখন:
- সাধারণত দীর্ঘ-দূরত্বে ডেটা স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়।
- ডেটার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
উদাহরণস্বরূপ– মডেম, মাউস, ইতাদি যন্ত্রে সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে ডেটা আদান-প্রদান হয়ে থাকে।
সুবিধাঃ ব্যয় কম, কারণ ডেটা চলাচলের জন্য একটি লাইন বা চ্যানেলের প্রয়োজন হয়।
অসুবিধাঃ ধীর গতি সম্পন্ন।
সিরিয়াল ও প্যারালাল ট্রান্সমিশনের মধ্যে পার্থক্য:
বিট সিনক্রোনাইজেশনঃ
সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন (Data Transmission) পদ্ধতিতে সিগন্যাল পাঠানোর সময় বিভিন্ন বিটের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। এই সমন্বয় না থাকলে প্রাপক যন্ত্র ডেটার শুরু ও শেষ বুঝতে পারে না। ফলে ডেটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে সিগন্যাল পাঠানোর সময় বিভিন্ন বিটের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিকে বলা হয় বিট সিনক্রোনাইজেশন।
এই বিট সিনক্রোনাইজেশনের উপর ভিত্তি করে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি তিন প্রকারঃ
১। অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Asynchronous Transmission)
২। সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (synchronous Transmission)
৩। আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন ( Isochronous Transmission)
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনঃ
অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনে(Asynchronous Transmission) ডেটা প্রেরক হতে প্রাপকে ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার পাঠানো হয়। এ ধরনের ট্রান্সমিশনে প্রেরক যে কোনো সময় ডেটা প্রেরণ করতে পারে এবং প্রাপক তা গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য প্রেরকের কোন প্রাথমিক স্টোরেজে সংরক্ষনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি ক্যারেক্টারের শুরুতে একটি Start Bit এবং শেষে একটি Stop Bit পাঠানো হয়। প্রতিটি ক্যারেক্টার পাঠানোর মাঝখানের সময়ের ব্যবধান ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
সুবিধাঃ
১। যেকোনো সময় প্রেরক ডেটা পাঠাতে পারে এবং প্রাপক তা গ্রহণ করতে পারে।
২। প্রেরক স্টেশনে প্রাইমারি স্টোরেজের প্রয়োজন হয় না।
৩। তুলনামুলকভাবে খরচ কম।
৪। কম ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী।
অসুবিধাঃ
১। দক্ষতা ও গতি কম।
২। যখন ডেটা চলাচল বন্ধ থাকে তখন মাধ্যমটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে।
ব্যবহারঃ
১। কম্পিউটার হতে প্রিন্টারে
২। কার্ড রিডার হতে কম্পিউটারে
৩। কম্পিউটার হতে কার্ড রিডারে
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
৪। কীবোর্ড হতে কম্পিউটারে
উদাহরণ: অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যবহার করে 20KB ডেটা ট্রান্সমিশনের দক্ষতা নির্নয়।
সমাধান:
প্রকৃত ডেটা বিট = 20KB = 20 × 8 Kb = 160 Kb = 1000 × 160 b = 160000 bit
প্রতিটি 8 bit গ্রুপের জন্য ওভারহেড ডেটা বিট প্রয়োজন = 3 bit
সুতরাং 160000 bit ডেটা প্রেরণের জন্য মোট ওভারহেড ডেটা বিট প্রয়োজন = (3/8) × 160000 = 60000 bit
মোট ডেটা বিট = প্রকৃত ডেটা বিট + ওভারহেড ডেটা বিট = 160000 bit + 60000 bit = 220000 bit
সুতরাং, দক্ষতা = (160000/220000) × 100% = 73%
সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনঃ
এ পদ্ধতিতে ডেটা প্রেরক হতে প্রাপকে ব্লক আকারে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে প্রেরক স্টেশনে ডেটাগুলিকে প্রাথমিক স্টোরেজে সংরক্ষণ করে নেওয়া হয়। তারপর ডেটার ক্যারেক্টারগুলোকে ব্লক বা প্যাকেট আকারে ভাগ করে প্রতিবারে একটি করে ব্লক বা প্যাকেট ট্রান্সমিট করা হয়। ব্লক ডেটার শুরুতে এবং শেষে যথাক্রমে হেডার এবং ট্রেইলর ইনফরমেশন থাকে। সাধারণত 80 হতে 132 টি বর্ণ নিয়ে এক একটি ব্লক তৈরি হয়। দুটি ব্লকের মাঝখানে সময় বিরতি সমান হয়ে থাকে।
সুবিধাঃ
১। সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের দক্ষতা অ্যাসিনক্রোনাসের তুলনায় বেশি।
২। ট্রান্সমিশন গতি অনেক বেশি।
৩। প্রতি ক্যারেক্টারের মাঝে বিরতির প্রয়োজন হয় না।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
৪। প্রতি ক্যারেক্টারের শুরুতে Start bit এবং শেষে Stop bit এর প্রয়োজন হয় না।
অসুবিধাঃ
১। প্রেরক স্টেশনে একটি প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয়।
২। তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।
ব্যবহারঃ
১। কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে ডেটা কমিউনিকেশনে ।
২। এক স্থান থেকে দূরবর্তী কোন স্থানে ডেটা স্থানান্তরে ।
উদাহরণ: সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যবহার করে 20KB ডেটা ট্রান্সমিশনের দক্ষতা নির্নয়।
সমাধান:
প্রকৃত ডেটা বিট = 20KB = 20 × 8 Kb = 160 Kb = 1000 × 160 b = 160000 bit
ধরা যাক, প্রতিটি ব্লকে ৮০ টি ক্যারেক্টার আছে, অর্থাৎ ব্লক সাইজ = 80×8 bit = 640 bit
প্রতিটি 640 bit গ্রুপের ব্লকের জন্য ওভারহেড ডেটা বিট প্রয়োজন = 32 bit
সুতরাং 160000 bit ডেটা প্রেরণের জন্য মোট ওভারহেড ডেটা বিট প্রয়োজন = (32/640)× 160000 = 8000 bit
মোট ডেটা বিট = প্রকৃত ডেটা বিট + ওভারহেড ডেটা বিট = 160000 bit + 8000 bit = 168000 bit
সুতরাং, দক্ষতা = (160000/168000) × 100% = 95%
অর্থাৎ ব্লকে ক্যারেক্টার সংখ্যা বেশি হলে ট্রান্সমিশন মেথডের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশনঃ
এটি অ্যাসিনক্রোনাস ও সিনক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশন(Data Transmission) এর সমন্বিত রুপ, যাকে আবার সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের উন্নত ভার্সনও বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে ডেটা প্রেরক হতে প্রাপকে ব্লক আকারে স্থানান্তরিত হয়।দু’টি ব্লকের মধ্যে সময়ের পার্থক্য 0 (শূন্য) একক করার চেষ্টা করা হয়।
সুবিধাঃ
১। ট্রান্সমিশন গতি অনেক বেশি।
২। প্রতি ক্যারেক্টারের মাঝে বিরতির প্রয়োজন হয় না।
৩। প্রতি ক্যারেক্টারের শুরুতে Start bit এবং শেষে Stop bit এর প্রয়োজন হয় না।
অসুবিধাঃ
১। তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।
২। প্রেরক স্টেশনে একটি প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয়।
৩। ডেটা ব্লক যথাযথভাবে প্রাপক পেয়েছে কিনা তা চেক করা যায় না এবং ভূল সংশোধন করার ব্যবস্থা নেই।
ব্যবহারঃ
১। সাধারণত রিয়েল টাইম অ্যাপ্লিকেশনের ডেটা ট্রান্সফারে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
২। বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন যেমন- অডিও বা ভিডিও কল এর জন্য এই পদ্ধতিতে ডেটা ট্রান্সমিশন হয়ে থাকে।