ন্যানো টেকনোলজি (Nano technology)
ন্যানো টেকনোলজি (Nano technology): পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে ন্যানো টেকনোলজি বলে। বোর্ড বই অনুসারে – বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার আকৃতির কোন কিছু তৈরি করা এবং ব্যবহার করাকে ন্যানো টেকনোলজি বলে।
ন্যানো হলো একটি পরিমাপের একক। ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানো মিটার। অর্থাৎ 1 nm = 10-9 m । আর এই ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি (Nano technology) বলে।
ন্যানো টেকনোলজির (Nano technology) জনক:
১৯৫৯ সালে আমেরিকান বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) তার “There’s Plenty of Room at the Bottom ” আলোচনায় প্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বর্ননা করেছিলেন। যেখানে তিনি পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লেষণের সম্ভাবনা বর্ণনা করেছিলেন।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়।
ন্যানো কী ?
ন্যানো(Nano) শব্দটি গ্রিক nanos শব্দ থেকে এসেছে যার আভিধানিক অর্থ dwarft ( বামন বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ)।
ন্যানো হলো একটি পরিমাপের একক। এটি কতটা ছোট তা কল্পনা করা কঠিন। ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানো মিটার। অর্থাৎ 1 nm = 10-9 m। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:
- এক ইঞ্চিতে 25,400,000 ন্যানোমিটার রয়েছে
- সংবাদপত্রের একটি পাতা প্রায় 100,000 ন্যানোমিটার পুরু
- তুলনামূলক স্কেলে, একটি মার্বেল যদি ন্যানোমিটার হয়, তবে পৃথিবীর আকার হবে এক মিটার
আর এই ন্যানোমিটার (1 থেকে 100 ন্যানোমিটার) স্কেলে যে সকল টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে। এই আকৃতির কোন কিছু তৈরি করা হলে তাকে সাধারণত ন্যানো-পার্টিকেল বলে।
অন্যভাবে বলা যায়- ন্যানো টেকনোলজি হলো এমন একটি বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি যা সাধারণত ১ থেকে ১00 ন্যানোমিটার স্কেলে পরিচালিত হয়ে থাকে।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
ন্যানো টেকনোলজিতে দুটি প্রধান পদ্ধতি:
ন্যানো টেকনোলজিতে দুটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। একটি হলো “bottom-up” বা নিচ থেকে উপরে এবং অপরটি “top-down” বা উপর থেকে নিচে।
ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ (bottom-up):
“bottom-up” পদ্ধতিতে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আণবিক উপাদান থেকে বিভিন্ন উপকরণ এবং ডিভাইসগুলো তৈরি করা হয় যা আণবিক নীতির দ্বারা রাসায়নিকভাবে নিজেদেরকে একত্রিত করে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র আকারের জিনিস দিয়ে বড় আকারের জিনিস তৈরি করা হয়।
বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্র (bottom-up):
“top-down” পদ্ধতিতে, বড় আকৃতির বস্তু থেকে ন্যানো-অবজেক্ট তৈরি হয়। অর্থাৎ বড় আকৃতির কোন জিনিসকে কেটে তাকে নির্দিষ্ট ক্ষুদ্রাকৃতি দেয়া হয়।
আমাদের বর্তমান ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি হল, “top-down” প্রযুক্তির।
ন্যানো টেকনোলজির (Nano technology) প্রয়োগক্ষেত্রঃ
১। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে
২। ন্যানো রোবট তৈরিতেক
৩। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে
৪। জালানি তৈরিতে
৫। কৃত্তিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরিতে
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
৬। ঔষধ তৈরিতে
৭। খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে
৮। বস্ত্র শিল্পে
৯। খাদ্যজাত পণ্যের প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরিতে
সুবিধাঃ
১। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক যন্ত্র অধিক মজবুত ও টেকসই, আকারে তুলনামূলক ছোট এবং ওজনে হালকা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
২। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগে উৎপাদিত ঔষধ “স্মার্ট ড্রাগ” ব্যবহার করে প্রাণঘাতী ক্যান্সার ও দুরারোগ্য ব্যাধি হতে দ্রুত আরগ্য লাভ করা যায়।
৩। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে খাদ্যজাত পণ্যের গুণাগুণ রক্ষা ও স্বাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে।
৪। ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে।
৫। ন্যানো প্রযুক্তি দ্বারা ফুয়েল সেল, সোলার সেল ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে সস্তায় শক্তি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
ICT অধ্যায় ভিত্তিক নোট ডাউনলোড করতে ক্লিক করো
৬। পানি ও বায়ু দূষণ রোধ সম্ভব হচ্ছে।
৭। ন্যানো টেকনোলজির (Nano technology) প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ন্যানো রোবট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে কার্যকরীভাবে ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে।
অসুবিধাঃ
১। ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে সার্কিট তৈরির প্রধান সমস্যা হল, স্থির বিদ্যুৎ। সাধারণ ইলেক্ট্রিক সার্কিটের মধ্যে এই স্থির বিদ্যুৎ থেকে সার্কিট কে রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকে। যদি তা না করা হত, তাহলে কোন কারণে স্থির বিদ্যুৎ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামকে নষ্ট করে দিত। কিন্তু ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেতে বৈদ্যুতিক সার্কিট কল্পনাতিত ছোট হয়ে যায় বলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে রক্ষা করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে ছোট সার্কিটে স্থিরবিদ্যুত প্রায় ১৫০০০ সেন্টিগ্রেড এর মত তাপ সৃষ্টি করে। এই তাপে সার্কিট এর উপকরণ গলে, সেই সার্কিটটিকে নষ্ট করে দিতে পারে। এই কারণে ১৯৯৭ এর পরে IC সার্কিটে গতানুগতিক ভাবে ব্যবহৃত এলুমিনিয়ামের পরিবর্তে তামা ব্যবহৃত হয়। কেননা তামার গলনাঙ্ক ১০৮৩ যেখানে এলুমিনিয়ামের গলনাঙ্ক ৬৬০০ সেন্টিগ্রেড। ফলে অধিক তাপমাত্রাতেও তামা এ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় ভাল কাজ করবে।
২। ন্যানো টেকনোলজি (Nano technology) ব্যয়বহুল। ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদিত পন্য ব্যয়বহুল।
৩। ন্যানো-পার্টিকেল মানব-শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৪। ন্যানো-পার্টিকেল দিয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরি হচ্ছে যার ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ।